By Dr. Swagata Chakraborty

কাল রাতে কড়া নেড়েছিল আধো-ঘুম চোখের জানলায় একঝাঁক স্বপ্ন।
জিজ্ঞেস করলো তারা- ঘামভেজা বালিশের নিচে
শৈশবের ইচ্ছেগুলো লুকিয়ে রেখেছো কেন করে অবহেলা অযত্ন?
নড়বড়ে তক্তপোষ, ভোঁতা ছুঁচ-পলকা সুতোর সেলাই, ছেঁড়া মশারির জাল
বিবর্ণ-চুনকাম, খোবলানো-ইঁট দাঁত দেখায়, চিরখাওয়া মনের ঘরের দেওয়াল।
বৈচিত্র্যহীন একগতে বাঁধা বিরক্তিকর মাস-সপ্তাহ-দিন,
হারিয়েছে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ, নিরুদ্দেশ শৈশবের ইচ্ছেপূরণের জিন।
কাল রাতে কড়া নেড়েছিল ক্রমাগত স্বপ্নেরা, আধো-ঘুম চোখের জানলায়
ঝুলিভরা রংপেন্সিল, আলু-কাবলি, কাগজের নৌকো, রূপকথা আর সস্তা খেলনায়।
স্বপ্নের করাঘাত, কিন্তু সে জানলা মরচে-লাগা জং-ধরা, অনেকদিন রয়েছে বন্ধ,
বললো স্বপ্নেরা- বন্ধ কেন? খুলে দাও আজ এ জানলা,
খুললে পরেই দিগন্তপ্রসারী নীল আকাশ, বুক ভরে নিও ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ।
স্পর্শকাতর ঘাসের শরীর দোলে অশ্রুত সুরে—
আনমনা দামাল হাওয়া সে তালে মেলায় ছন্দ,
একনিমেষে হুড়োহুড়ি, খাঁচাবন্দি ইচ্ছেরা আনচান উরু উরু
বুনোহাঁসের ঝাঁক পড়ন্ত সূর্যের দিকে উড়ে যায় ডানা মেলে,
অজানার অন্বেষণ, অভিযান-উত্তেজনা, ছাপোষা ভীরু বুক দুরু দুরু।
স্বপ্নেরা কড়া নেড়ে হঠাৎ খুলে দিলো মনের বন্ধ জানলা—
জানলার ওপারে ক্যানভাস জোড়া বিস্তীর্ণ কাশের খেত,
দুকূলভাষী নদী, উপচে পড়ে বাঁধভাঙা একগুচ্ছ ভালোলাগার রেশ।
আদ্র বাতাসের ঝাপ্টা বলিরেখা আঁকা তামাটে মুখে,
শীতল বৃষ্টি ভাদ্রের রোদেপোড়া ঊষর তাপদগ্ধ বুকে।
ঘামভেজা বালিশ, রূঢ বাস্তব উধাও কাল রাতে ক্ষণিকের তরে,
মন্দ কি যদি স্বপ্নেরা নিস্তব্ধ গুমোট এক এক রাতে বন্ধ জানলায় কড়া নাড়ে?
দলাপাকানো অপূর্ণ ইচ্ছেগুলো দোদুল্যমান কাশ, একঝাঁক বুনোহাঁস হয়ে পাখা মেলে,
শিকল ভেঙে উড়ে যায় যদি সূর্যের পানে, ফাটলধরা বাস্তব থেকে সহস্র আলোকবর্ষ দূরে।