By Susmita Chattopadhyay
আমরা বাঙালি, আমরা আমুদে
আমাদের বারোমাসে তেরোর চেয়েও বেশি পার্বণ...
সে শারদোৎসব হোক, পৌষ সংক্রান্তি বা নববর্ষের নতুন খাতা;
ঘরোয়া ব্রতকথাতেও আমরা উৎসবের আমেজ পাই।
আমরা বাঙালি, আমরা খাদ্যরসিক
ইলিশ হোক বা চিংড়ি;
খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে ঘটি বাঙালের সাবেকি দ্বন্দ্বকে
আমরা বিশেষ পাত্তা দিই না।
ঐযে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া কথাটা
ওটা আমাদের জন্য যথাযথ একটা প্রবাদ।
আমরা বাঙালি, আমরা একটু আলসে
দুপুর হলেই বিছানায় গা এলিয়ে একটু ভাতঘুম
আমাদের বেশ পছন্দের,
তবে পরীক্ষা প্রস্তুতি বা লক্ষ্য পূরণের নেশায় পড়লে
আমরা ঘুমের ঠিকানা ভুলে যেতে পারি বেমালুম।
আমরা বাঙালি, আমরা সাহিত্যানুরাগী
প্রেম-রহস্য-রোমাঞ্চে আমরা যেমন বুঁদ হয়ে থাকি বইয়ের পাতায়;
নব নব সৃষ্টিতেও আমরা বেশ সাবলীল কলম-খাতায়।
আমরা বাঙালি, আমরা আড্ডাপ্রেমী
সন্ধ্যে হলেই পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকানে
কিংবা বাড়ির হেঁসেল থেকে, টা সহযোগে চা
আমদের আড্ডা জমিয়ে দেয়।
আমরা বাঙালি, আমরা ভ্রমন পিপাসু
ছুটির মেয়াদ একদিনের বেশি দুদিন হলেই
আমরা বাক্সপ্যাটরা গুছিয়ে হইহই করে বেরিয়ে পড়ি...
পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গলের সাথে সাথে
মামারবাড়ি, মাসিরবাড়ি, পিসিরবাড়িও আমার প্রিয় গন্তব্য।
আমরা বাঙালি, আমরা অতিথিপরায়ণ
আমাদের মায়ের মাসির মেয়ের পিসিও আমাদের পরম আত্মীয়;
বিয়ে, জন্মদিন বা অন্নপ্রাশন; যেকোনো অনুষ্ঠানেই
আমরা শতেক দেহ, অভিন্ন হৃদয় হয়ে উঠি।
আমরা বাঙালি
আমরা বর্ষায় খিচুড়ি, গরমে পান্তা, শীতে চড়ুইভাতি প্রেমী;
আমাদের শুধু রসনা নয়, চরিত্রেও বৈচিত্র্য...
আমরা ঝগড়ুটে, আমরা আন্তরিক
আমরা আলসে, আমরা কর্মঠ
আমরা প্রতিবাদী, আমরা সহ্যশীলও...
আমাদের রক্তে একইসঙ্গে নেতাজি, জীবনানন্দ;
নজরুল, রবি ঠাকুর আবার শ্রীরামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দও বিরাজমান।
আমরা বাঙালি, আমরা ব্যতিক্রমেও ব্যতিক্রমী;
আমরা জাতিধর্ম নির্বিশেষে, ভালোবাসার পরম আশ্লেষে...
সান্ধ্যকালের নামেগানে অথবা কাকভোরের
আজানে বিশ্বাসী;
আমরা উৎসবেতে ঝগড়া ভুলি, সানন্দে করি কোলাকুলি,
আমরা প্রতিবেশীর নিন্দা করেও বিপদ এলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দি...
আমরা আসলে সংজ্ঞাহীন,
আমরা বৈশিষ্ট্য দিয়েই অস্তিত্বের জানান দিই...
আমরা সদর দোরে করজোড়ে, স্বাগত জানাই নমস্কারে;
অচেনাকেও আত্মীয়তায় বাঁধি...
আমরা চেঁচিয়ে বলি ভালোবাসি, আট কিংবা হোকনা আশি...
চওড়া হাসি লাগিয়ে ঠোঁটে চলি;
সত্যি আমরা আপনভোলা, আমরা আপামোর বাঙালি...।