অপরিচিতি শিল্পী

By Jahnabi Mandal

হে অপরিচিত শিল্পী তুমি,

কবে কোন যুগে, কোন মুহুর্তে

তোমার হাতে ধরা পড়েছিল..

এই নির্জীব পাথর খানি।

হয়তো সেদিন সূর্যদেব তাঁর

সমস্ত আলোকতা, উজ্জ্বল রৌদ্র

ছড়িয়ে ফেলছিল পৃথিবীতে,

পর্বতস্রোতস্বীনি ক্ষীণতমা তটিনী ,

হঠাৎ বেগে ঝাঁপিয়ে পড়ে 

অজানা দুর্বার উদ্দেশ্যে….

দূর বনের লতাপাতায় আচমকা বসন্তের

সমাগমে অরণ্যপ্রান্তর বনদেবীর

আরাধনায় মত্ত হয়ে ওঠে….

সেই রাতে জোৎস্না তাহার শীতলতায়

ব্যাকুল প্রেমিকচিত্তে ভরিয়ে তোলে বিরহবেদনা

চন্দ্র তাঁর রূপে লজ্জা দেয় 

কোমল দেহবতি সুন্দরীদের….

হয়তো সেই মুহূর্তে, সেই কোন শুভক্ষণে,

তোমার প্রথম বাহু স্পর্শে,

নির্জীব পাথেরেও তড়িৎ খেলেছিল।

লোহার হাতুড়ির আঘাতে জর্জরিত 

হয়ে, ধীরে ধীরে আঘাতে আঘাতে

গড়ে উঠছিল এক সৃষ্টি….

দিবারাত্রি সেই অক্লান্ত পরিশ্রমে,

কপাল সিক্ত হয়ে যায় ঘর্মে

ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ে দীর্ঘ গা বেয়ে

তবু গড়ে তুলছ আপন হৃদয় দিয়ে

প্রেমিক রুপে সেই প্রেমিকাকে।

রাতের অন্ধকার নেমে আসতেই

জড়িয়ে যায় চোখের পলক,

অবশ হয়ে পড়ে হাত

দেহ লুটিয়ে পড়ে মাটিতে।

সূর্যের প্রথম কিরণ যখন,

এসে পড়ে তোমার সেই সৃষ্টিতে;

চেয়ে দেখেছ কি অবাক দৃষ্টিতে?

সত্যিই কি পাথরের মূর্তি?

নাকি জীবন্ত মানবরূপী দেবী!

আত্মসমর্পণ করেছ সেই সৃষ্টিতে

সে যে তোমারই, যুগে যুগে

সে যে তোমারই, তুমিই তার স্রষ্টা।

পাথরে জেগেছে লাবণ্য, দেহমূর্তি

হইতে বেয়ে পড়ছে রূপের বন্যা।

তোমার স্পর্শে নির্জীব পাথরে

এসেছে প্রাণ, সেই সজীব 

নারীমূর্তি কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তাকিয়ে,

তোমরাই পানে হে মহাশিল্পী।

হাজার বছর পরেও মানুষ পুজিছে

সৌন্দর্য্যকে, বাহ বাহ করিছে রাজার নাম;

স্রষ্টা রয়ে গেছে কোন কালে,

অজানা লুপ্ত ইতিহাসের পাতায়।

কিন্তু হে মহাজন, তোমার প্রেম

এখনো তোমার স্বাক্ষর লয়ে,

শ্রদ্ধায় স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা ভরে।

সে আজীবন ঋণী তোমার কাছে,

তোমার স্পর্শ রয়েছে তার প্রতি অঙ্গে।

অম্লান বদনে সেই অনুক্ষণ মনে পড়ে

শেষ চেয়ে থাকা প্রেমভরে….

সে মহাশিল্পী, ম্লান হয়ো না

অজানা নামে পূজিত তুমি

মানবজাতি ভুলিবে না শিল্পী

গ্রহণ করো অভিবাদন,লহ প্রণাম।


Leave a comment